মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন
সুমন খান: মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের চাঁদাবাজীর অভিযোগে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি আসলে কি তা উদ্ঘাটন হয়নি এখনো। পরিকল্পিতভাবে মামুনকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ মামুনের পরিবারের। মামুনের হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের বিচার চেয়ে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বিকাল ৫টায় বিক্ষোভ ও মানব বন্ধন করেছে গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর ও মতলব উত্তর থানার সাধারণ জনগণ।
মানব বন্ধন, প্রতিবাদসভা ও বিক্ষোভ মিছিলে কয়েক হাজার নারী পুরুষ জড়ো হয়। অপরদিকে বেলতলী লঞ্চঘাটেও কয়েকশত নারী পুরুষ নদীর পাড়ে জড়ো হয়ে এবং বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদেরও দাবী কেন মতলব উত্তর থানা মামুনের হত্যার মামলা নিচ্ছে না। কেন মামলা নিয়ে তালবাহানা করছে। মামুনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করে বলেন, মামুন প্রাবসী ছিল। লকডাউনে বাড়িতে আসে। করোনার কারণে সে আর বিদেশে যেতে পারেনি। পরবর্তীতে সে এলাকায় ড্রেজারের ও নদীতে ছোপ ফেলে ব্যবসা করে আসছিল। রাজনৈতক কারণে মামুনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিক্ষোভকারীরা আরো অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থল গজারিয়া থানায় না হওয়ায় গজারিয়া থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নেয়নি। অভিযোগ লিখে মতলব উত্তর থানায় বারবার যাওয়ার পরেও তারা আমাদের মামলা নেয়নি। নৌ পুলিশও আমাদের হত্যা মামলা না নিয়ে মামুনের ভাই ও এলাকার লোকদের বিরুদ্ধে পূর্ব পরিকল্পিত চাঁদাবাজী মামলা করেছে পুলিশ।
নিহত মামুনের মা হোসনে আরা বেগম (৬০) জানান, আমার ছেলে কোন চাঁদাবাজ না। আমার ছেলে মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় বেলতলী ও মতলব উত্তর থানা এবং জামালপুর গ্রামের সাধারণ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতো সব সময় মামুন। মামুনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার হত্যাকারীদের বিচার চাই।
মামুনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২৫) জানান, আমার দুই বছরের একটি ছেলে মাহিম। তাকে নিয়ে আমি এখন কি করে জীবন চালাবো। আমার স্বামী মামুন প্রবাসী। আমার স্বামী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতো সব সময়। তাকে একটি অপরিচিত ছেলে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। এই হত্যার বিচার চাই। দুই বোন, শিউলি আক্তার (৪০) ফেরদৌসী আক্তার তাদেরও একটিই আকুতি মামুন হত্যার মামলা নিতে হবে এবং দ্রুত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
এ বিষয়ে নিহত মামুনের বাবা মো: আলী ওরফে মামুদ আলী জানায়, চরশিমুলিয়ার আ: খালেকের ছেলে রিপন (৩০) মামুনকে ডেকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সাইদুর রহমান (৩৫), মোখলেছ (৩৫), মফিজুল (৪০), গোলজার খাঁ (৪০), আনিছ (৪৫), নজরুল (৪৫), সেলিম (৪০) আলম (৪০) সহ আরো কিছু লোকজন মিলে মমুনকে হত্যা করা হয়েছে। মামুনের বাবা মামুদ আলী বলেন, আমার ছেলেকে রিপন ডেডে নিয়ে যায়, নদীর ছোপ ভাঙার বিষয়ে বাল্কহেড কর্তৃপক্ষ মামুনকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় চাদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার তালতলী সাকিন সংলগ্ন সন্তোষপুর ধনেগদা নদীর ঘাটে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এরা মামুনের মাথায় আঘাত করে হত্যা করে।
বেলতলী নৌ পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের কাছে হত্যা মামলা কেন নেয়া হয়নি এমন প্রশ্ন করলে তিনি একেকবার একেক রকম বক্তব্য দেন। তিনি প্রথমে মামলা করতে কেউ তার কাছে যায়নি বলেছেন। পরবর্তীতে তিনি বলেছেন লিখিত কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। মামুনের পক্ষে কেউ আসলেও আমার সাথে দেখা হয়নি।
চাদপুর জেলা নৌ পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, লিখিত এজহার নিয়ে এসেছিল। তবে যে ছেলে মামুনকে উদ্ধার করে দিয়ে এসেছে তারও নামও এজহারে লিখেছে। কিছু ভালো লোকদের নামও এজহারে লিখে নিয়ে আসায় সেই এজহারটি ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের নাম লিখে অভিযোগ নিয়ে আসতে বলা হয়েছে তবে তারা এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ তারা নিয়ে আসেনি।